ছোটবেলা থেকেই হাজারো প্রতিবন্ধকতার মাঝে বড় হওয়া। পরিবারে অভাব, অনটন ছিল নিত্য সঙ্গী। এদিকে একঝাঁক স্বপ্ন ছিল ছোট্ট ছেলেটির চোখে। সে স্বপ্ন দেখতো একদিন সে অফিসার পদে চাকরি করবে। কিন্তু স্বপ্নপূরণের দরজা ছিল তখন বহুদূর। তবে হাল ছাড়তে নারাজ ছিল ছেলেটি। মনের জেদ ও একাগ্রতাকে সঙ্গী করে দিনের পর দিন ধরে চলে পরিশ্রম। অবশেষে আসে সেই দিন। ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (UPSC) -এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে IAS অফিসার হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমানে একজন উচ্চপদস্থ অফিসার পদে কর্মরত রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের গোবিন্দ জয়সওয়াল।
উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বেনারসের একটি ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন গোবিন্দ জয়সওয়াল। খুব কম বয়সে মাতৃহারা হন তিনি। আর বাবা ছিলেন পেশায় রিক্সাচালক। নিত্য দিন অভাবের মধ্যে দিয়ে দিন কাটতো তাঁদের। ঝাঁ চকচকে স্কুলের পরিবর্তে স্থানীয় সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেন গোবিন্দ। তাঁর বাবার শারীরিক অবস্থাও ভালো ছিলনা। তা সত্ত্বেও নিত্যদিন পরিশ্রম করতেন তিনি। উপার্জন কম হওয়া সত্ত্বেও ছেলের পড়াশোনায় এতটুকু আপোস করতে রাজি ছিলেন না গোবিন্দর পিতা। ছেলের স্বপ্ন পূরণের পথে প্রতিনিয়ত পাশে ছিলেন তিনি। পড়াশোনা কমপ্লিট করে ইউপিএসসি পড়ার চিন্তা শুরু করেন গোবিন্দ। শুরু হয় তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও দিন রাত এক করা পড়াশোনা।
আরও পড়ুনঃ ২৩ বছর বয়সে UPSC সফল বঙ্গতনয়া তমালি
প্রতিটি অধ্যায় খুঁটিয়ে পড়েছেন গোবিন্দ। নিয়মিত নজর রাখতেন কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সে। প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ২০০৬ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। আর প্রথমবারের চেষ্টাতেই করেন বাজিমাত। মাত্র বাইশ বছর বয়সে দেশের মধ্যে ৪৮ তম স্থান অর্জন করে সিনিয়র IAS হিসেবে নির্বাচিত হন গোবিন্দ জয়সওয়াল। তবে তাঁর চলার পথটা মোটেও সহজ ছিল না। এক ইন্টারভিউতে গোবিন্দ জানান রিক্সা চালকের সন্তান হওয়ায় নানান উপহাসের শিকার হয়েছেন তিনি। তবে সে সকল উপহাসের সপাট জবাব ছিল তাঁর সাফল্য। তিনি মনে করতেন কঠোর পরিশ্রম ও উপযুক্ত কৌশল থাকলে যে কোনো কাজে সফলতা অর্জন সম্ভব। তিনি তাঁর কাজের দ্বারা প্রমাণ করেছেন, যে হাল না ছেড়ে সফল হতে পারেন আপনিও। অভাবের সংসার থেকে আজ তিনি দেশের উচ্চপদস্থ অফিসার। উত্তরপ্রদেশের গোবিন্দ জয়সওয়াল এখন সকল পরীক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা।