সাড়া দেশ জুড়ে সাড়া ফেলেছে বিনোদ চোপড়ার ছবি ‘টুয়েলভথ ফেল’। অফিসার মনোজ কুমার শর্মার জীবনযুদ্ধ পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক। অফিসার মনোজ শর্মার মতোই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বছর তিরিশের বঙ্গসন্তান পার্থ করণ। জঙ্গলমহলের জেদি ছেলে পার্থ পরাজিত হয়েছেন বারংবার। একটানা পাঁচবার ফিরে এসেছেন স্বপ্নের দরজা থেকে। তবুও তাঁর হার না মানা মানসিকতা, নিজের প্রতি বিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রমের হাত ধরেই আজ সারা দেশে সপ্তম স্থানাধিকারী তিনি। UPSC বিজয়ী পার্থর মুখে এখন যুদ্ধ জয়ের হাসি। পার্থর কথায়, বিজয়ী হওয়ার সূত্র একটাই। লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে চলা। জঙ্গলমহলের যে ছেলেমেয়েরা এই কঠিন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চান, তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন পার্থ করণ।
বাঁকুড়ার সারেঙ্গার বাসিন্দা পার্থ করণ। ছোটবেলা থেকেই মেধাবি ছাত্র তিনি। পড়াশোনার প্রতি ছিল অমোঘ টান। বাবা অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক। মা গৃহবধূ। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হওয়ায় পরিশ্রমের অর্থ বুঝেছিলেন শৈশব থেকেই। স্থানীয় স্কুল সারেঙ্গা মাহাত্মাজী স্মৃতি বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন পার্থ। দ্বাদশ শ্রেণী পাশের পর কলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজে ভর্তি হন পদার্থবিদ্যা নিয়ে। স্নাতক পাশের পর আইআইটি জ্যাম পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হন আইআইটি গুয়াহাটিতে। সেখান থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করে পিএইচডি করবেন বলে মনোস্থির করেন। আর সে কারণেই তিনি উড়ে যান দিল্লি। রাজধানীতে পৌছে ভিন্ন স্বপ্নে মন বাঁধেন পার্থ। ঠিক করেন UPSC পরীক্ষায় পাশ করে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে চাকরি করবেন।
আরও পড়ুনঃ দৈনিক ছ’ঘন্টা পড়েই আইএএস বঙ্গতনয়া স্মিতা
স্বপ্নের জেদ বুকে চেপে কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন পার্থ করণ। কিন্তু UPSC-ও তার জাত চেনায়। বার বার পরীক্ষায় বসে দোড়গোড়া থেকে ফিরে আসতে হয় পার্থকে। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না পার্থ। তবে প্রথম চার বছরের প্রচেষ্টায় তাঁর আইএএস ও আইপিএস হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। তবু দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গিয়েছেন পার্থ। তিনি ঠিক করেন, বিষয় পরিবর্তন করে নতুন করে প্রস্তুত হবেন। সেই সময় থেকে তিনি জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার পরীক্ষা প্রস্তুতি আরম্ভ করেন। কিন্তু সেখানেও বাধা! প্রথমবার ইন্টারভিউ পর্বে পৌছেও ফিরে আসতে হয়। তাও স্বপ্নের হাত ছাড়েননি পার্থ করণ। ২০২৩ সালের ইউপিএসসি (UPSC 2023) পরীক্ষায় ধরা দেয় সাফল্য। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সপ্তম স্থান দখল করে পাশ করেন পার্থ করণ। বর্তমানে তিনি বাংলার গর্ব, জঙ্গলমহলের গর্ব।