রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় সেমিস্টার পদ্ধতিতে পঠন-পাঠন এবং পরীক্ষা শুরু করার ঘোষণা করল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। এদিন বৃহস্পতিবার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি ডঃ চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সেমিস্টার সিস্টেম নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রাখলেন। এই বিষয়ে তিনি জানালেন, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পঠন-পাঠন এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে সেমিস্টার সিস্টেম শুরু করা হবে। চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২৪ সালে যে সমস্ত পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন ফল প্রকাশের পর তারা মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার সময় সেমিস্টার সিস্টেমে পঠন-পাঠন শুরু করবেন।
চলতি বছরে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া পরীক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবেন সেমিস্টার সিস্টেমের মাধ্যমে। মোট চারটি সেমিস্টারের মাধ্যমে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রতিটি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে পরীক্ষার্থীদের পাশ ফেল নির্ধারণ করা হবে। সেক্ষেত্রে কি হবে নতুন সিলেবাস, মোট কত নম্বরের পরীক্ষা হবে এবং পাশ করার জন্য কত নম্বরের প্রয়োজন হবে ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্য গুলি জেনে নিন আজকের এই প্রতিবেদন থেকে।
✅ পরীক্ষা পদ্ধতি
❖ একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে মোট ৪ টি সেমিস্টারের পরীক্ষা আয়োজিত হবে। একাদশ শ্রেণীতে প্রথম এবং দ্বিতীয় সেমিস্টার। দ্বাদশ শ্রেণীতে তৃতীয় এবং চতুর্থ সেমিস্টার। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণী মিলিয়ে মোট ৪ টি সেমিস্টার।
❖ একাদশ শ্রেণীতে প্রথম এবং দ্বিতীয় সেমিস্টারের নম্বর মিলিয়ে মার্কশিট তৈরি করা হবে। একইভাবে দ্বাদশ শ্রেণীতে তৃতীয় এবং চতুর্থ সেমিস্টারের নম্বর মিলিয়ে মার্কশিট তৈরি করা হবে।
❖ একাদশ শ্রেণির ক্ষেত্রে প্রথম সেমিষ্টারে কেবলমাত্র MCQ প্রশ্ন থাকবে এবং দ্বিতীয় সেমিষ্টারে SAQ সহ অন্যান্য বড় প্রশ্ন থাকবে। অনুরূপভাবে দ্বাদশ শ্রেণীর শুরুতে অর্থাৎ তৃতীয় সেমিস্টারে কেবলমাত্র MCQ প্রশ্ন থাকবে এবং চতুর্থ সেমিস্টারে SAQ সহ অন্যান্য বড় প্রশ্ন গুলি থাকবে।
আরও পড়ুনঃ মে মাসে প্রকাশিত হবে মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট
✅ পরীক্ষার নম্বর বিভাজন
❖ প্র্যাকটিক্যাল এবং নন প্র্যাকটিক্যাল বিষয়ে দুটি ভিন্ন নম্বর বিভাজন অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া হবে।
❖ প্রাকটিক্যাল বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রথম সেমিস্টারে ৩৫ নম্বরের MCQ প্রশ্ন থাকবে এবং দ্বিতীয় সেমিস্টারে SAQ সহ অন্যান্য বড় প্রশ্ন মিলিয়ে ৩৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। ৩০ নম্বরের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা আগের মতই আয়োজিত হবে।
❖ নন প্র্যাকটিক্যাল বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রথম সেমিস্টারের ৪০ নম্বরের MCQ প্রশ্ন থাকবে এবং দ্বিতীয় সেমিস্টারে SAQ সহ অন্যান্য বড় প্রশ্ন মিলিয়ে ৪০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। এক্ষেত্রেও আগের মতই ২০ নম্বরের প্রজেক্ট ওয়ার্ক থাকবে।
✅ পাশ নম্বর
❖ প্রতিটি বিষয়ে উত্তীর্ণ হওয়া বা পাশ করার জন্য মূল নম্বরের ৩০% নম্বর পেতে হবে। লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে এবং প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার ক্ষেত্রে আলাদাভাবে পাশ নম্বর পেতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে গেলে লিখিত পরীক্ষার মূল নম্বরের ৩০% নম্বর এবং প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় পাস করতে গেলে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার মূল নম্বরে ৩০% নম্বর পেতে হবে।
❖ একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণি দুটি ক্ষেত্রেই দুই সেমিস্টারের নম্বর মিলিয়ে পাশ নম্বর তুলতে হবে পড়ুয়াদের।
❖ দুটি সেমিস্টার মিলিয়ে যেকোন বিষয়ে ৩০ নম্বর অথবা তার অধিক নম্বর পেলে পরীক্ষার্থীরা সেই বিষয়ে পাশ করবেন।
একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা পড়ুয়ারা নিজের স্কুলেই দিতে পারবেন। মাধ্যমিকের পর পড়ুয়ারা যে স্কুলে ভর্তি হবেন সেই স্কুলেই একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা হবে। দ্বাদশ শ্রেণীতে দুটি সেমিস্টারের ক্ষেত্রেই বাইরের স্কুলে পরীক্ষা হবে। দুটি সেমিস্টারের পরীক্ষাই একটি নির্দিষ্ট স্কুলে হবে। এই প্রসঙ্গে আরও জানানো হয়েছে দ্বাদশ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়া মাত্রই অর্থাৎ বছরের শুরুতেই পড়ুয়াদের অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হবে। সেমিস্টার সিস্টেমের প্রথম উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে আগামী ২০২৬ সালে। সিলেবাস সংক্রান্ত বিষয়ে জানানো হয়েছে আর্টস এবং সাইন্স বিভাগের সিলেবাসে বিশেষ কিছু পরিবর্তন করা হয়নি। কমার্স বিভাগের ক্ষেত্রে কিছু কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিবর্তিত এবং পরিমার্জিত সিলেবাস উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে। সেখান থেকে পড়ুয়ারা প্রত্যেকটি বিষয়ের আলাদা আলাদা সিলেবাস দেখতে পাবেন।