চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করল রাজ্য সরকার। বিগত কয়েকদিন ধরেই গোটা রাজ্য উত্তাল হচ্ছে এসএসসির চাকরি হারাদের কান্নায়, হাহাকারে! এর মূল কারণ ভারতের শীর্ষ আদালতের এসএসসি মামলার রায়। হলে চাকরি হারিয়েছেন ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মী। বাতিল হয়েছে সম্পূর্ণ ২০১৬ সালের প্যানেল। অযোগ্য এবং দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের পাশাপাশি চাকরিহারা হয়েছেন যোগ্য কর্মীরাও। এর ফলে বিগত কয়েকদিন ধরেই শহরের এলাকায় এলাকায় আন্দোলন এবং প্রতিবাদ শুরু হয়। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে এই প্রতিবাদ শৃঙ্খলাতাও ভঙ্গ করেছে। যার জন্য মাঠে নামতে হয়েছে আইনি বিভাগকে।
তবে এবারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বস্ত করলেন চাকরি হারাদের। তিনি জানিয়েছেন, আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও সরকার থেমে থাকবে না। এই সমস্যার একটি উপযুক্ত সমাধান বার করবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। এই ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বুধবার বিকেলে শিক্ষা দপ্তরের বেতন তালিকায় নাম পাওয়া গেল যোগ্য কর্মীদের। মূলত চাকরি হারাদের হঠাৎ করে আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে উদ্ধার করার উদ্দেশ্যেই এমন পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের। এই উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, “শিক্ষকদের মাইনে সংক্রান্ত পোর্টাল আপডেট করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোনও স্কুলে কোনও শিক্ষককে বাদ দেওয়া হয়নি। কোথাও বেতন বন্ধের কথা বলাও হয়নি।”
সরকার এই বিষয়ে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও শহরের একাধিক এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলে একত্রিত হয়েছিলেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা। শৃঙ্খলতা বজায় রাখার জন্য আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় রাজ্যকে। ঐদিন সকাল থেকেই পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বড় ধরনের গোলযোগ আটকে দেওয়া হলেও, এর পিছনে যে রাজনৈতিক উসকানি রয়েছে, এমনটা মনে করছেন অনেকেই। এই গোলমাল এর খবর পেয়েই শিক্ষামন্ত্রী চাকরি হারা কর্মীদের ধৈর্য ধরার কথা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ মাধ্যমিক পাশে ভারতীয় রেলে এপ্রেন্টিস নিয়োগ, প্রতিমাসে স্টাইপেন্ড ৭৭০০ টাকা
রাজ্যের শিক্ষক শিক্ষিকারা যাতে নিজেদের মর্যাদা না ভুলে যান, সেই দিকেও সচেতন করা হয়েছে। নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ প্রতিটি শিক্ষককে ‘সংযত’ হওয়ার কথা বলেছেন। এমনকি শিক্ষকরা যাতে কোনরকম দলের প্ররোচনায় এসে ভুল পদক্ষেপ না নিয়ে ফেলেন, সেই দিকেও সতর্ক করেছেন মুখ্যসচিব। এই উদ্দেশ্যে শনিবার আবারও চাকরিহারাদের সাথে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি চাকরি হারাদের সর্বতোভাবে সাহায্য করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই বিষয়ে পুনরায় গোলযোগ বা প্রতিবাদ থেকে বিরত থাকার ডাক শিক্ষা মন্ত্রীর।
চাকরি হারাদের পাশে থেকেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। ইতিমধ্যেই রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখার উদ্দেশ্যে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে একটি পিটিশন জমা পড়েছে শীর্ষ আদালতে। এই বিষয়ে দ্রুত রিভিউ পিটিশন ফাইল করা হবে বলে জানালেন মুখ্য সচিব। তিনি জানালেন, “আমরা আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করছি, ওঁদের পাশে আছি। মানবিক দিক খতিয়ে দেখেই আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি। এমন কিছু করবেন না যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয় বা আইনি ব্যবস্থায় কোনও জটিলতা তৈরি হয়।”
আরও পড়ুনঃ বর্তমানে কি কি চাকরির ফর্ম ফিলাপ চলছে একনজরে দেখে নিন
এর পাশাপাশি অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা বাচ্চাদের পড়ানোর দায়িত্বভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এই বিষয়ে যথেষ্ট খুশি সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে চাকরি হারাদের উদ্দেশ্যে সঠিক পদক্ষেপ অবশ্যই নেওয়া হবে। তবে এই পদ্ধতির মাঝে আশা না হারানোর কথা বলছে রাজ্য সরকার। আগামী ১৭ ই এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।