বিকল্প কর্মসংস্থান

গরু খামারের ব্যাবসা করে লাখ লাখ টাকা আয়, পড়ুন বিস্তারিত

Advertisement

আমাদের দেশের অনেকে ব্যাবসার জন্য যথেষ্ট টাকা থাকা সত্ত্বেও সঠিক ব্যবসার ধারণা না থাকার জন্য ব্যবসা শুরু করতে পারেন না। সফল উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে। আর আপনি যদি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চান তবে আপনার হার না মানা মনোভাব থাকতে হবে। আর আপনার এই রকম মনোভাবই আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহয্য করবে। আর সেই রকম উদ্যোক্তাদের জন্য আমরা নতুন একটি বিকল্প কর্মসংস্থানের খবর নিয়ে হাজির হয়েছি।

আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করার কথা ভেবেও পিছিয়ে আসি। কারন সব ব্যবসা গ্রামে গড়ে তোলা সম্ভব হয় না। কিন্তু আজকের এই প্রতিবেদনে যে ব্যবসার কথা জানানো হবে তা বিশেষত গ্রামাঞ্চলের জন্য। অর্থাৎ গ্রামে এই ব্যবসাটি খুব ভালোভাবে শুরু করা যাবে। আজকের এই প্রতিবেদনে আপনাদের জানাবো গরুর খামারের ব্যবসা নিয়ে। ‘গরু খামারের ব্যবসা’ শুনে অনেকেই হয়তো হাসছেন, কিন্তু যদি আপনার লক্ষ্য হয় জীবনে স্বনির্ভর হওয়া তাহলে ‘গরু খামারের ব্যবসা’ নিয়ে হাসাহাসি না করে এই ব্যবসা কীভাবে শুরু করবেন তা ভাবতে পারেন। সঠিক পরিকল্পনা দিয়ে এই কাজ শুরু করলে যেকোনো চাকরির থেকে আর্থিক দিক থেকে অনেক বেশি লাভবান হবেন পাশাপাশি অনেক বেকার ছেলে- মেয়েদের নিজের খামারে কর্মসংস্থান দিতে পারবেন।

গরু খামারের ব্যবসা কেন করবেন?
এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। জীবনে একটু বেশি টাকা রোজগার করতে হলে মূলধন ও পরিশ্রম একটু বেশি লাগে তাই তাদের জন্য গরু খামার ব্যাবসা একটি ভালো পথ। বর্তমানে আমাদের দেশে গরুর অনেক চাহিদা রয়েছে। গরুর খামার দিয়ে প্রধানত আপনি দুধের ব্যাবসা করতে পারেন। এছাড়াও বায়োগ্যাস, গোবর এবং শেষে গরু বিক্রি করে ব্যাবসা করা যায়। গরুর দুধ দিয়ে মাখন, ঘি, ও পনির তৈরী করে বিক্রি করা যায়। ৫ লাখ টাকা নিয়ে গরুর খামার তৈরি করতে পারেন। আর এই খামারের ব্যবসা করে আপনি অনেক লাভবান হতে পারবেন।

স্থান নির্বাচন:
গরুর খামারের জন্য এমন একটা জায়গা বা স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে আলো বাতাস এবং বৃষ্টি বা র্বষা কালে জল জমে না থাকে। তাছাড়া গরুর ময়লা আর্বজনা ফেলতে সুবিধা হয় সেই রকম জায়গা বা স্থান নির্বাচন করতে হবে।

খামার তৈরি পদ্ধতি:
জায়গা নির্বাচন করার পরে ঐ জায়গায় একটি খামার ঘর বানাতে হবে। আপনি যদি ১০ টা গরু দুই সারিতে পালন করতে চান তাহলে আপনাকে খামারটা করতে হবে ২০ ফুট লম্বা এবং ১০ ফুট চওড়া। এবং উচ্চতা হতে হবে ৯ ফুট। খামারের নিজ থেকে ২.৫ ফুট উচু করে দেয়াল দিতে হবে। এবং দেয়াল থেকে উপর পর্যন্ত জাল লাগাতে হবে। যাতে বাইরের আলো বাতাস খামারের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। খামারের উপরের চালটা শক্তপোক্ত বানাতে হবে, কারন যেকোনো ঝড় বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যেন খামারটির ক্ষতি না হয়।

ভালো জাতের গাভী:
খামার বানানো শেষ হলে, আপনার পরের কাজ হলো আপনি কি ধরনের গরু পালন করবেন তা নিয়ে চিন্তা করা। যদি আপনি গাভী পালন করতে চান তাহলে ভালো দুধওয়ালা বা ভালো জাতের গাভী ক্রয় করতে হবে। আর যদি আপনি ষাঁড় পালন করতে চান তাহলে ভাল জাতের ষাঁড় ক্রয় করবেন। তবে আপনি গাভি ও ষাঁড় উভয় পালন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে দুই সারিতে গাভি ও ষাঁড় পালন করতে হবে। এক সারিতে গাভী, আরেক সারিতে ষাঁড় পালন করবেন।

আরও পড়ুনঃ
ড্রাগন ফলের চাষ করে লাখপতি হন
১০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করুন এই ব্যবসা
এই ব্যবসা শুরু করে দিনে ৩ হাজার রোজগার করুন

গরুর খাবার:
গরুর খাবারের জন্য সুষম খাদ্যের মধ্যে কমপক্ষে ৫০- ৫৫% শর্করা থাকতে হবে। চাউলের কুড়া, ভুট্টা গমের ভূষি খাওয়াতে হবে। আমিষ খাদ্য এর জন্য মুশরী, মুগ, খেশারী, মাসকালাই বা ডালবীজের খোসা খাওয়াতে হবে। এবং গরুর পুষ্টির জন্য কাচা ঘাস খাওয়াতে হবে।

খামার পরিচালনা:
খামারে গরুর সংখ্যা অনুযায়ী পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত লোক নিয়োগ করতে পারেন। খামারে গরুর সংখ্যা কম হলে নিজেই খামারের দেখাশোনা করতে পারেন।

খামারের লাভ:
আপনি যদি আপনার খামারে ৫ টি গাভী পালন করেন। যদি প্রতিটি গাভী দৈনিক গড়ে ৩ কেজি সকালে দুধ দেয় তাহলে মোট দুধের পরিমান হলো ১৫ কেজি। আর বিকালে ২ কেজি করে দুধ দিলে মোট দুধ হবে ১০ কেজি। তাহলে প্রতিদিন ২৫ কেজি দুধ উৎপন্ন হয়। বাজার মূল্য কেজি প্রতি ৪৫ টাকা হলে আপনার প্রতিদিন ২৫×৪৫ = ১১২৫ টাকা রোজগার। তাহলে মাসে ১১২৫×৩০ = ৩৩,৭৫০ টাকা রোজগার হবে।
এবার ৫ টি গাভীর পিছনে প্রতিদিনের খাবার এবং মাঝে মধ্যে রোগের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ পত্র সব মিলিয়ে মাসিক খরচ ২০,০০০ টাকা (আনুমানিক) ধরলে ও মাস শেষে আপনার কাছে লাভ থাকছে ১৩০০০ টাকা। বছরে প্রায় ১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা যা শুধুমাত্র লাভ হিসেবে থাকছে। এই হিসাবটি মাত্র ৫ টি গাভির জন্য। কয়েক বছরের মধ্যেই আপনার ব্যবসার উন্নতি হবে, এবং গাভির সংখ্যা বাড়লে এই লাভের পরিমান বাড়বে।

পরিশেষে বলা যায়, যেকোন ধরনের ব্যাবসা মানেই ঝুঁকিপূর্ণ। গরু খামারের ব্যাবসাও এর ব্যাতিক্রম নয়। তবে এক্ষেত্রে লাভের পরিমাণও বেশি। সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে পারলেই আপনি অল্প সময়ের মধ্যে সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠবেন এবং মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন।

Related Articles