বহু আন্দোলন, ধর্ণা, প্রতিবাদের পরেও বদলায়নি ছবিটা। গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বঞ্চনার ৫৯১ দিন। সারা শহর যখন উৎসবে মাতোয়ারা তখনও তারা নিয়োগের আশায় রাস্তায় বসে। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, দীপাবলির পর ভাইফোঁটা। ধর্ণামঞ্চে উপস্থিত থেকেই সামিল হচ্ছেন রাজ্যের SSC চাকরিপ্রার্থীরা।
একটা দীর্ঘমেয়াদি সময়। নিজেদের ঘর, পরিবার থেকে বহুদূরে তারা। একসাথে সোচ্চার হয়েছেন চাকরির দাবিতে। শহরের উৎসব, রোশনাইয়ের মাঝে গর্জে ওঠা আন্দোলনে এসে মিশেছে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত স্বর। এভাবেই ধর্ণামঞ্চে তারা হয়ে উঠেছেন পরিবারসম। সেখানে কেউ খুঁজে পেয়েছেন ভাই বা দাদা, কেউ খুঁজে নিয়েছেন নিজের বোন বা দিদিকে। এভাবেই ধর্ণামঞ্চে ৫৯১ দিন কাটানোর পর তারা হয়ে উঠেছেন পরিবার। এবং চাকরিপ্রার্থীদের কথায়, “এই পরিবার অটুট সম্পর্কে বাঁধা”। এ বছর সেই পরিবারের ভাইদের ফোঁটা দিয়েই ভাইফোঁটা পালন করলেন SSC ধর্ণামঞ্চে উপস্থিত চাকরিপ্রার্থীরা। চোখের জলে জানালেন, “পরের বছর হয়তো বাড়ির ভাইকে ফোঁটা দিতে পারবো”। এদিন গান্ধী মূর্তির পাদদেশে SSC চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে পালন করা হলো ভাইফোঁটা উৎসব। করা হল মিষ্টিমুখও। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিপিএম এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ভাইফোঁটা নেন তিনি। তিনি জানান, SSC চাকরিপ্রার্থীদের এই আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত লড়তে তিনি আছেন তাঁদের সাথে।
চাকরির খবরঃ টেট পাশ সার্টিফিকেটের মেয়াদ ‘লাইফটাইম’
অন্যদিকে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের ধর্ণামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। চাকরিপ্রার্থীদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। কোনও উৎসবের আঁচ পাননি তারা, প্ল্যাকার্ড হতে ক্রমাগত সোচ্চার হয়েছেন চাকরির দাবিতে। পেয়েছেন কিছু আশ্বাস, তবে হয়নি কোনোওপ্রকার নিয়োগ।
একদিকে SSC ও একদিকে টেট চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে গর্জে উঠেছে রাজ্য। বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে আন্দোলনের রেশ। তবুও সরকারের পক্ষ থেকে আসেনি কোনোও নোটিশ। এদিন চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, আজ তাদের রাস্তায় নয় চাকরি পেয়ে ভাইফোঁটার ছুটি কাটানোর জায়গা ছিল। কিন্তু আর যাই হোক এরূপ ছুটি তারা চাননি! আবার অন্য একজন চাকরিপ্রার্থীর কথায়, সারা শহরে যখন দীপাবলির রোশনাই তখন গান্ধী মূর্তির পাদদেশেই অন্ধকার কেন! প্রতিবাদ মঞ্চে ভাই বোনদের মধ্যে ভাইফোঁটার এই আয়োজনে সাময়িক খুশি হলেও একমাত্র নিয়োগ প্রক্রিয়াই তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। কিন্তু কবেই বা হবে নিয়োগ? কবেই বা গৃহীত হবে ব্যবস্থা? ধর্ণামঞ্চে, প্রতিবাদে, অপেক্ষায় চাকরিপ্রার্থীরা।