কথায় আছে ‘লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে।’ এই কথাটির প্রতিফলন বর্তমান সমাজে কি সত্যিই ঘটছে? তবে তার উল্টো ঘটনা ঘটেছে মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞা থানার বড়া গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর পরিবারের এক ছেলে বাবু দলুই -এর সাথে। চাকরি না পেয়ে মানসিক ভাবে হতাশাগ্রস্থ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে বাবু দলুই। সুইসাইড নোটে সে লিখেছে, ‘আমি বাবু দলুই, বিদায় নিচ্ছি। আমাদের সমাজ ও রাজ্য খুব খারাপ।’
অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র বাবু দলুই মাধ্যমিকের 78%, উচ্চমাধ্যমিকে 75% নম্বর নিয়ে পাশ করার পরে ইংরেজিতে স্নাতক নেয়। স্নাতক পাশ করার পর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে শিক্ষক হওয়ার আশায় ডি.এল.এড প্রশিক্ষণ নিয়েছিলো সে। তবে আর শিক্ষক হওয়া হলো না তার। এ রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের অবস্থা কারও অজানা নয়। শিক্ষক নিয়োগের দুর্দশা দেখেও সে থেমে থাকেনি। চালিয়ে গেছে তার কঠোর পরিশ্রম। একের পর এক চাকরির পরীক্ষা দিয়েছে। নিজের খরচ চালাতে দিনমজুরের কাজ করতেও পিছুপা হয়নি। বছর সাতেক আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত হয়েছেন বাবা। দুই বছর আগেই মাও ছেড়ে চলে গেছেন। আপনজন বলতে ছিল তার বিশ্বাস ও মনের জোর।
পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ক্লার্কশিপ নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকায় 6 হাজারের মধ্যে তার নাম এসেছিল। এই সাফল্যে বাবু দলুই খুব আনন্দ পেয়েছিল। বীরভূমের রামপুরহাটের বাসিন্দা বাবু দোলুই -এর জামাইবাবু তমাল দলুই জানান, ‘কলকাতা -তেই ছিল বাবু, বলেছিল একটা কাজ খুঁজছি। তারপর পিএসসির মেরিট লিষ্টে নাম বেরোনোয় কম্পিউটারে টাইপ শেখার জন্য সে বাড়িতে ফিরে আসে। তারপরই সব ওলট-পালট হয়ে গেল। পিএসসির তালিকা বাতিল ঘোষণা করা হল। দ্বিতীয় তালিকা বের হলে দেখা যায় আঠেরো হাজারে তার নাম, চূড়ান্ত ভাবে ভেঙে পড়ে সে।’
তারপরেই ঘটে সেই অঘটন। বেকারত্বের জ্বালা ও যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বিছানার চাদর গলায় জড়িয়ে ‘সমাজ ও রাজ্যের’ প্রতি তীব্র ধিক্কার জানিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলো বাবু।