অন্যান্য খবর

Archer Sheetal Devi: মাত্র ১৬ বছর বয়সে দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মান ‘অর্জুন পুরস্কার’! বিশ্বের প্রথম ‘বাহুহীন’ তীরন্দাজ শীতল দেবী

ভারতবাসীর অফুরন্ত গর্ব এবং অনুপ্রেরণা বাহুহীন 'অর্জুন'। অসামান্য সাফল্যের কারণে সবাই বলছেন তিনি এযুগের 'একলব্য'। ভূস্বর্গের বিস্ময় বালিকা শীতল দেবীর জীবন কাহিনী পড়ুন আজকের প্রতিবেদনে।

Advertisement

জন্মের পর থেকে শারীরিক প্রতিকূলতার সম্মুখীন। বিরল রোগ ‘ফেকোমেলিয়া’-য় আক্রান্ত সে। যার ফলে বেড়ে ওঠেনি দুই হাত। তবু তাঁর দু চোখ ভরা স্বপ্নের স্ফুলিঙ্গ। বুকে অদম্য জেদ, মনে ইচ্ছেশক্তি। এই তিন শক্তিকে সঙ্গী করে বিশ্বমঞ্চে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সকলকে। জম্মু কাশ্মীরের মাত্র ষোলো বছর বয়সী শীতল দেবী এখন ভারতের বিস্ময় বালিকা। ক্রীড়ামঞ্চে তাঁর লক্ষ্য স্থির ও স্পষ্ট। তীর ধনুকে তাঁর আশ্চর্য নিয়ন্ত্রণ। দুই হাত নেই, পা দিয়ে তির ছুঁড়েই তিনি লক্ষ্যভেদ করেন। প্যারা এশিয়ান গেমসে তাঁর দুরন্ত ফলাফল নজর কেড়েছে সবার। ভারতবাসীর মতে, শীতল দেবী সাধারণ কিশোরী নন, তিনি হলেন আজকের একলব্য।

জম্মু কাশ্মীরের লোধিয়ার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শীতল। ছোটো থেকে বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর অ্যাথলেট হওয়ার স্বপ্নে প্রশ্নচিহ্ন দাগে সমাজ। কিন্তু কথায় আছে না, প্রতিভা কখনও চাপা থাকেনা। কোনো না কোনো ভাবে সে প্রকাশ পাবেই। তাঁর দুচোখ ভরা স্বপ্নে ছিল ‘তিরন্দাজি’। কিন্তু সেখানেও আসে বাধা। হাতের অভাবে শীতল পা দিয়েই ধনুক চালাবেন বলে ঠিক করেন। তবে, প্রথম দিকে পায়ে ধনুক তোলা একপ্রকার চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে তাঁর জন্য। শীতল পরাজয় মানতে রাজি ছিলেন না। তাই শুরু হয় কঠোর অনুশীলন। ক্রমে কোচ কুলদীপ কুমারের নজরে পড়েন শীতল। তাঁর প্রবল ইচ্ছে দেখে তাঁকে অ্যাকাডেমিতে আসতে বলেন কুলদীপ স্যার। কোচের কথায়, ইচ্ছাশক্তির পাশাপাশি প্রবল বুদ্ধি আর বিচক্ষণতা ছিল শীতলের মধ্যে। এরপর পেশাদারী পদ্ধতি চলে তাঁর অনুশীলন।

Archer Sheetal Devi

আরও পড়ুনঃ পয়ঁত্রিশ বার ব্যর্থ হওয়ার পরেও সফল আইএএস অফিসার বিজয় বর্ধন 

২০১৯ সালে ভারতীয় আর্মি কিস্টওয়ারে তিরন্দাজি প্রতিযোগিতায় লড়াকু মনোভাবের জন্য সকলের মন জয় করে নেন শীতল। ২০২২ সালে তিরন্দাজিকে কেরিয়ার হিসেবে বেছে নেন বিস্ময় বালিকা। নামেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে। সেই বছর এশিয়ান প্যারা গেমসে দুটি সোনা জেতেন শীতল দেবী। কম্পাউন্ডের ব্যক্তিগত ও দলগত দুই বিভাগের স্বর্ণ পদক আসে তাঁর ঝুলিতে। এরপর প্যারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও রুপো যেতেন তিনি। এশিয়ান প্যারা আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপেও দ্বিতীয় স্থান জয় করেন শীতল। এই সাফল্যের কারণে ভারত সরকার সম্প্রতি তাঁকে সম্মানিত করল দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মান অর্জুন পুরস্কারে।

তিরন্দাজি কেরিয়ারের দুরন্ত ফর্মের কারণে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের প্রথম স্থানে উঠে আসেন বিস্ময় বালিকা। ভারতের সোনার মেয়ে শীতলের মুকুটে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে নতুন পালক। এশিয়ান প্যারালিম্পিক কমিটির তরফে আয়োজিত হওয়া এশিয়ান অ্যাওয়ার্ডস মঞ্চে একমাত্র ভারতীয় হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন শীতল দেবী। তবু বিস্ময় বালিকার লক্ষ্য আরও উঁচুতে। আসন্ন প্যারিস প্যারালিম্পিক্সে সোনা জিততে কঠোর পরিশ্রম শুরু করেছেন তিনি। আপামর ভারতবাসী এখন তাঁর দিকে চেয়ে। নিজের কেরিয়ারে চূড়ান্ত সফল হোক শীতল। মনে প্রাণে চান সকলেই।

Archer Sheetal Devi

Related Articles