সকাল হতেই মপেডে চড়ে মালা-চুড়ি- ফিতে সহ রকমারি দ্রব্য ফেরি করতে বের হন বাঁকুড়ার কানাই কর্মকার। সারাদিনে যা বিক্রি হয় তাতেই কষ্টে-সৃষ্টে সংসার চলে কর্মকার পরিবারের। সে বাড়িরই ছোটছেলে ছোটন টপকে ফেলেছেন জেইই মেইন এবং অ্যাডভান্স পরীক্ষার গন্ডি। সুযোগ পেয়েছে খড়গপুর আইআইটি তে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার।
ছোট থেকেই মেধাবি বাঁকুড়ার কর্মকার পরিবারের ছোট ছেলে ছোটন। গ্রামের বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পাশের পর বাঁকুড়ার একটি বিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য ভর্তি হন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোনোর পরই শুরু হয় তার জীবনের উত্তরণ। তখন থেকেই আইআইটি খড়গপুর কে পাখির চোখ করে শুরু হয় তার কঠোর পরিশ্রম। স্বপ্ন আইআইটি তে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পাওয়া। এরপর জেইই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ছোটন। জেইই মেইন ও অ্যাডভান্স পরীক্ষার উত্তীর্ণ হয়ে মেধাতালিকার ওপর দিকে জায়গা করে নেন তিনি। অবশেষে খড়গপুর আইআইটি -র মতো নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেড নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ মেলে।
বাড়ির ছোটছেলের আইআইটি তে পড়ার সুযোগ হওয়ায় খুশির বাতাবরণ কর্মকার পরিবারে। তবে এত খুশির মাঝেও বাধ সেধেছে অভাবের সংসার। আইআইটি তে সুযোগ পেলেও পড়াশোনার খরচ কিভাবে সামলাবেন, সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাবা কানাই কর্মকার। ছোটনের মেধা এবং পড়াশোনার প্রতি অধ্যাবসায় দেখে শত কষ্টের মধ্যেও পড়াশোনায় ঘাটতি হতে দেননি। ছোটনও পড়াশোনার পাশাপাশি বিক্রিবাটায় সাহায্য করতেন বাবাকে। তবে এখন আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর খরচ কিভাবে সামলাবেন সে নিয়ে চিন্তিত কর্মকার পরিবার।
এখানের ৪ বছরের কোর্স অনুযায়ী খরচের ১২ লক্ষ টাকা জোগাড় করা কার্যত চ্যালেঞ্জ তাঁদের জন্য। ভর্তি বাবদ ১ লক্ষ ১৭ হাজার টাকার অঙ্ক ও কম নয়। এবং আগামী ৯ই ডিসেম্বরের মধ্যেই ভর্তির এই লক্ষাধিক টাকা জমা দিতে হবে। সাথে রয়েছে কাউন্সিলিং এর খরচ ৩৫ হাজার টাকা। তবে জানা যায় প্রতিবেশী, শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধব দের সাহায্যার্থে কাউন্সিলিং এর টাকা উঠলেও পড়াশোনার বাকি খরচ চালানো একপ্রকার কঠিন তাঁদের ক্ষেত্রে। তাই কর্মকার পরিবারের কথায়, সরকারি সাহায্য পেলে হয়তো ছোটনের স্বপ্নপূরণের পথের বাধা দূর হবে। সরকারি সাহায্য চায় ছোটন নিজেও। এসব বাধা অতিক্রম করে ছেলের স্বপ্ন যাতে পূরণ হয়, সেদিকেই তাকিয়ে বাঁকুড়ার কর্মকার পরিবার।