ছোটবেলায় নিজের চোখে দেখেছেন দিনমজুরের কাজ করত বাবা। কখনো কাজ না পেলে চায়ের দোকান দিতেন। সেই দোকানেই বাবাকে সাহায্য করত ছোট্ট হিমাংশু। উত্তরাখণ্ডের হিমাংশু মা-বাবা সহ ভাইবোনেদের নিয়ে থাকতেন ছোট্ট একটি বাড়িতে। পড়াশোনা সহ বিভিন্ন কাজের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। তাই অনেক সময় মাসের পর মাস দেখা হত না পরিবারের সঙ্গে। পর্যটকদের ভিড়ের মরশুমে বাড়ি ফিরে এসে বাবার চায়ের দোকানে সাহায্য করতেন তিনি। তবে এই ছোট্ট চায়ের দোকান থেকে পাঁচজনের সংসার চালানো হয়ে উঠেছিল অসম্ভব। তাই একসময় মায়ের হাত ধরে উত্তরাখন্ড ছেড়ে উত্তরপ্রদেশে মামার বাড়িতে চলে আসেন। হিমাংশুর বয়স যখন ১১ বছর তখন উত্তরপ্রদেশের সিরউলিতে মামার বাড়িতে একটি ছোট্ট মুদিখানার দোকান খোলেন তাঁর বাবা। হিমাংশুকে ভর্তি করা হয় ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে। স্কুলে পড়াশোনার জন্য প্রত্যেক দিন ৭০ কিলোমিটার রাস্তা যাতায়াত করতেন কিশোর হিমাংশু।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য দিল্লিতে চলে আসতে হয় তাঁকে। এখানেই দিল্লির হিন্দু কলেজে পড়াশোনার সময় জীবনের লক্ষ্য বদলে যায় তাঁর। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, “আমি যে গ্রামে থাকতাম সেখানে সবকিছু খুব ঢিলেঢালা গোছের। দিল্লিতে এসে দেখলাম ব্যস্ততা কাকে বলে। সবাই এখানে ছুটছে।” প্রথম কয়েকটা মাস দিল্লির শহরে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় চলে যায়। তিনি জানিয়েছেন তার এই বদলের পিছনে দিল্লির হিন্দু কলেজের শিক্ষক এবং বন্ধুদের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। হিন্দু কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন তিনি। সেবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন হিমাংশু। গবেষণার কাজের জন্য বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া প্রায় শেষের মাথায় ছিল। তবে হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল করে আইএএস হতে চেয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ IAS প্রিয়াঙ্কা গোয়েলের হাল না ছাড়ার অবিশ্বাস্য কাহিনী
এরপরই নিজের লক্ষ্য পূরণের জন্য ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট তিন বার ইউপিএসসির সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। প্রথমবার ইউপিএসসি পরীক্ষায় পাশ করে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ট্রাফিক সার্ভিসের সুযোগ পেয়েছিলেন। ২০১৯ সালে পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে আইপিএস অফিসার হওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু তিনি ঠিক করেছিলেন দেশের প্রশাসনিক বিভাগে কাজ করবেন। তাই ২০২০ সালে আবার পরীক্ষায় বসে দেশের মধ্যে ১৩৯ তম স্থান অধিকার করেন। সেই সুবাদেই আইএস অফিসার হওয়ার সুযোগ পান। তার কথায় বাড়িতে সাহায্য করার তেমন কেউ ছিল না। অন্যদিকে প্রথাগত প্রশিক্ষণ নেয়ার মত আর্থিক অবস্থাও ছিল না বাড়িতে। তবে নিরন্তর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া, ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা এবং দারুন আত্মবিশ্বাসের জোরেই আজ তিনি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন।