ছোট থেকেই দুচোখ ভরে স্বপ্ন দেখে মানুষ। ভালো রোজগার করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চান সকলে। আর তা যদি স্বপ্নের পেশা হয়, তাহলে তো আর কথাই নেই। ইউপিএসসির সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতিতে প্রতি বছর যুক্ত হন হাজার হাজার প্রার্থী। কিন্তু সবাই উত্তীর্ণ হতে পারেন না। অনেকেই মাঝ পথে ঘুরিয়ে নেন কেরিয়ারের মোড়। আবার এদের মধ্যেই অনেকে আছেন যারা হাল ছাড়ার পাত্র নন। লড়াই জারি রেখেই স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেরেন তাঁরা। আজ এই প্রতিবেদনে তেমনই এক লড়াকু মেয়ের কথা বলবো। যে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই আজ দেশের আইএএস অফিসার হিসেবে নিযুক্ত।
মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলার ছোট্ট গ্রাম আমদারা। সেই গ্রামে বড় হয়ে উঠেছেন অফিসার সুরভি গৌতম। তবে তাঁর নামের আগে এই ‘অফিসার’ সন্মানটি বসানোর জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে তাঁকে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল শারীরিক প্রতিবন্ধকতার লড়াই। ছোট থেকে মেধাবি ছাত্রী সুরভি দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় চোখ ধাঁধানো রেজাল্ট করেন। দুটি পরীক্ষাতেই তিনি পান ১০০-এ ১০০ নম্বর। কিন্তু, দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা দেওয়ার পরেই রিউম্যাটিক ফিভারে। তাঁর চিকিৎসার জন্য নিজের গ্রাম থেকে পনেরো দিন অন্তর তাঁকে যেতে হত ১৫০ কিমি দূরে জব্বলপুরে। শারীরিক চিকিৎসার সঙ্গে নিজের পঠনপাঠন জারি রেখেছিলেন সুরভি। টুয়েলভের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি পাশ করেন স্টেট ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ট্রান্স পরীক্ষা।
আরও পড়ুনঃ নিজে পড়াশোনা করে UPSC ‘তে AIR 28 চন্দ্রজ্যোতি সিং
মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে বড় হয়ে ওঠা সুরভি যোগ্যতা অর্জন করে ভর্তি হন ভোপালের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। সেখানে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগে ভর্তি হন তিনি। প্রথমদিকে ইংরেজি কথোপকথনে খানিক জড়তা থাকায় হীনমন্যতায় ভুগতেন তিনি। কিন্তু ক্রমেই কাটিয়ে ওঠেন সকল বাধা। প্রতিদিন ১০টি করে নতুন ইংরেজি শব্দ অর্থ-সহ শিখতে থাকেন তিনি। এক সময় দক্ষ হয়ে ওঠেন স্পোকেন ইংলিশে। অবশেষে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে টিসিএস-এ চাকরি পান সুরভি। কিন্তু কর্পোরেট সংস্থার বদলে তাঁর আগ্রহ ছিল সিভিল সার্ভিসে। যথারীতি স্বপ্ন সফল করতে ফের শুরু হল তাঁর পরিশ্রম। ২০১৩ সালের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সফল হয়ে সর্বভারতীয় মেধাতালিকায় জায়গা করে নেন সুরভি। তিন বছর পর লক্ষ্যভেদ করে তিনি হয়ে ওঠেন দেশের উচ্চপদস্থ আইএএস অফিসার। সমস্ত প্রতিবন্ধকতা জয় করে যেভাবে নিজের স্বপ্ন সফল করেছেন তিনি তাতে আজ সুরভি গৌতম সকল প্রার্থীদের কাছে একজন অনুপ্রেরণা।