‘টুয়েলফথ ফেল, হারা ওহি যো লড়া নেহি’ বইটির পরতে পরতে ফুটে উঠছে একজনের গল্প। টুয়েলফথ ফেল থেকে আইপিএস অফিসার হয়ে ওঠা কাহিনির নায়ক সেই মনোজ শর্মা। এক অদম্য জেদের নজির তিনি। কিভাবে এক দ্বাদশ অনুত্তীর্ণ ছেলের জীবনের মোড় পরিবর্তন হয়েছিল তারই প্রতিফলন ঘটেছে শীর্ষক বইটিতে।
অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশের মুরেনা জেলায় জন্ম মনোজের। ছাত্রজীবনে পড়াশোনায় সেরকম ভালো ছিলেন না তিনি। নবম, দশম, একাদশ শ্রেণী পাশ করেছেন নকল করে। ভেবেছিলেন দ্বাদশ শ্রেণীতেও ‘নকলের’ সাহায্যেই পাশ করে যাবেন। কিন্তু সেখানেই এলো বাধা। দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় টুকলির ওপর এলো কড়া বিধিনিষেধ। অতএব পরীক্ষার হলে নকলের সাহায্য পেলেন না মনোজ। অনুত্তীর্ণ হলেন দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায়। পরিকল্পনা ছিল দ্বাদশ পাশের পর টাইপিং শিখে কাজে যোগ দেবেন। কিন্তু সফল হলো না সেই ভাবনাও। পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষোভ ছিলই। জেলাশাসকের নির্দেশে পরীক্ষায় ‘নকল’ বন্ধ হওয়ায়, তখন থেকেই জেদ পোষেন মনোজ। একদিন সেই জেলাশাসকের মতোই ক্ষমতাবান হবেন তিনি।
দ্বাদশ অনুত্তীর্ণ হলে দাদার সঙ্গে কাজে যুক্ত হন মনোজ। শুরু করেন টেম্পো চালানো। কিন্তু একদিন পুলিশ টেম্পোকে আটক করার তিনি পৌছে যান মহকুমাশাসকের দফতরে। কিন্তু সেখানে গিয়েই সিদ্ধান্ত বদল করেন মনোজ। টেম্পো ছাড়াতে মহকুমাশাসকের কাছে অনুরোধের পরিবর্তে জানতে থাকেন মহকুমাশাসক পদে চাকুরিরত হতে কিভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হয়! সবটা শুনে সেদিনই ঠিক করেন মহকুমাশাসক হওয়ার প্রস্তুতি নেবেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ পরিক্ষার ১০ দিনের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ টেটের
এরপর এক নতুন যাত্রা পথে পাড়ি জমান মনোজ। জামাকাপড় নিয়ে চলে আসেন গ্বালিয়রে। নতুন শহরে টাকাপয়সার অভাবে পথেই রাত কাটান তিনি। অর্ধেক দিন জুটতো না খাবারও। তবে চেষ্টা থেকে বিরত থাকেননি মনোজ। যুক্ত হন লাইব্রেরিয়ান পদে। সাথে পিওনের কাজও করতেন পাশাপাশি। এরপরেই চলে আসেন দিল্লিতে। বিত্তশালী বেশ কিছু পরিবারের পোষ্য দেখভালের কাজে নিযুক্ত হন চারশো টাকার বিনিময়ে। সেই টাকা দিয়েই শুরু করেন পড়াশোনা। কলেজ উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশের পরীক্ষায় বসেন তিনি। প্রথম বারের পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি পাশ করলেও ব্যর্থ হন চূড়ান্ত পর্যায়ে। তবে হার মানেননি মনোজ। অবশেষে চতুর্থ বারের প্রচেষ্টায় আইপিএস পরীক্ষায় পাশ করেন মনোজ শর্মা। এরপর ২০০৫ সালে মহারাষ্ট্র ক্যাডারের আইপিএস হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদে মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে নিয়োগ হয় তাঁর।
মনোজের কথায়, তাঁর জীবনের অগ্রগতিতে দুটি বই অধিক মাত্রায় প্রভাব ফেলেছিল। একজন ম্যাক্সিম গোর্কি ও অন্যজন আব্রাহাম লিঙ্কন। ওঁনাদের ভাবধারার প্রভাবিত হন মনোজ শর্মা। এবং একই সাথে তাঁর জীবনের অন্যতম জোর ছিলেন তাঁর প্রেমিকা। দুঃসময়ে সাহস জোগানোর সাথে পাশে ছিলেন সবসময়। এভাবেই ‘টুয়েলফথ ফেল, হারা ওহি যো লড়া নেহি’ বইটি জুড়ে প্রতিফলিত মনোজ শর্মার অদম্য জেদের নিদর্শন প্রেরণা জোগাবে আগামীদিনের পড়ুয়াদের।