নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে তোলপাড় পশ্চিমবঙ্গ। প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিকের দুর্নীতির ফল ভুগছেন সাধারণ মানুষ। বারংবার আঙুল উঠছে পর্ষদের দিকে। দুর্নীতির পাশাপাশি কারচুপি ও নম্বরে গোলমাল হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসছে। টেট পাশের পরও ‘ফেল’ বলে গণ্য হতে হচ্ছে বহু প্রার্থীকে। এর আগেও এমন একটি মামলা ওঠে আদালতে। আরও একবার ফের একই ধরণের মামলা শোনার পর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন পর্ষদ সভাপতি গৌতম পালকে। সরাসরি পর্ষদ সভাপতির বেতন বন্ধের হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি। বিচারপতির নির্দেশ শুনে আদালতে ভেঙে পড়েন পর্ষদ সভাপতি।
সম্প্রতি ২০১৬ সালের এক টেট পরীক্ষার্থী উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করে জানায়, প্রথমে তাঁকে টেট পাশ জানানোর পরেও তাঁকে টেট ‘অনুত্তীর্ণ’ বলে দাবি করা হয়েছে। এমনকি ২০২০ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাঁকে অংশগ্রহণের সুযোগও দেওয়া হয়নি। পরে আদালতে মামলা দায়ের করে নিয়োগ প্রক্রিয়া অংশ নেওয়ার আর্জি জানান ওই ব্যক্তি। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন ওই ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সুযোগ দিতে হবে। গত ৭ জুন মামলার শুনানিতে মামলাকারী জানান, পর্ষদ তাঁকে ইন্টারভিউতে ডাকেনি। ঘটনা সাপেক্ষে পর্ষদের আইনজীবী জানান, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা হওয়ায় এই নির্দেশ কার্যকর করা যায়নি। এরপর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মামলার নম্বর জানতে চান। কিন্তু পর্ষদের আইনজীবী তা বলতে ব্যর্থ হওয়ায় পর্ষদ সভাপতি গৌতম পালকে নিজ এজলাসে বেলা ৩টেয় জরুরি তলব করেন বিচারপতি।
আরও পড়ুনঃ অবৈধ শিক্ষকদের তালিকা দ্রুত জমা দেওয়ার নির্দেশ দিল আদালত
পর্ষদ সভাপতি আদালতে উপস্থিত হতে একই প্রশ্ন তথা ডিভিশন বেঞ্চের মামলা নম্বর জানতে চান বিচারপতি। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হন গৌতম পাল। এরপরই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্ট নির্দেশ দেন, ‘আদালতে মিথ্যে তথ্য পেশ করায় পর্ষদকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হল।’ এর সঙ্গে পর্ষদ সভাপতির বেতন বন্ধের নির্দেশ দেন বিচারপতি। হাইকোর্টের এহেন নির্দেশ শুনে এজলাসে ভেঙে পড়েন পর্ষদ সভাপতি। নিজ ভুল স্বীকার করে গৌতমবাবু বলেন, “হুজুর আমি দিন রাত কাজ করি। আমার মায়ের বয়স ৮০ বছর। তিনি অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসা চলছে। আমি পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য। আমাদের দুই সপ্তাহ সময় দিন। আমরা আপনার আগের নির্দেশ মেনে চলব। ডিভিশন বেঞ্চে মামলা থাকলে তা প্রত্যাহার করে নেব। আর ওই প্রার্থীকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সুযোগ দেব।” পর্ষদ সভাপতির বক্তব্য শুনে তাঁকে সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।