একটা সময় ছিল যখন মাওবাদী আতঙ্কে ঘুম ভাঙতো ঝাড়গ্রামের বাসিন্দাদের। খুনখারাপি গুলির শব্দে দিন কাটাতেন তাঁরা। বেঁচে থাকাটাই যেখানে আস্ত প্রশ্নের মুখে, সেখানে স্বপ্ন দেখাটা ছিল বিলাসিতা। তবে এই অন্ধকারে পথভ্রষ্ট না হয়ে সেদিন ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন জঙ্গলমহলের তরুণী, ঝাড়গ্রামের মেয়ে সুপ্রিয়া দাস। রাজ্য সরকারের জনমুখী প্রকল্পের সহায়তায় ও কঠিন অধ্যাবসায়ের দ্বারা ‘নেট’ ও ‘গেট’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি।
ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁধগোড়া পঞ্চায়েত এলাকার চিঁচুরগেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সুপ্রিয়া দাস। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। ২০১৩ সালে বাঁধগোড়া এলাকার স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। মাধ্যমিকে ভালো ফল থাকায় পেয়েছিলেন স্কলারশিপ। সেই টাকায় কিনেছিলেন একাদশ শ্রেণীর বই। ২০১৫ সালে সেবায়তন স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন তিনি। রেজাল্ট ভালো হওয়ায় সেবারেও মেলে স্কলারশিপ। এরপর ঝাড়গ্রামের রাজ কলেজ থেকে স্নাতক হন সুপ্রিয়া। সে সময় কন্যাশ্রী প্রকল্প থেকে মেলে ২৫ হাজার টাকা। ২০২০ সালে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বোটানি নিয়ে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। ভালো রেজাল্ট করায় স্কলারশিপ পান তিনি। এরপর সর্বভারতীয় ‘নেট’ ও ‘গেট’ পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন সুপ্রিয়া। দীর্ঘ অধ্যাবসায় ও মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনার সাফল্য মিললো শেষ পর্যন্ত। সর্বভারতীয় ‘নেট’ পরীক্ষায় ৮৭ তম স্থান অধিকার করেছেন সুপ্রিয়া। সাথে ‘গেট’ পরীক্ষায় ১৩৯০ তম স্থান নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ মেঘের দেশে স্বপ্ন সফর বাংলার মেয়ের
সুপ্রিয়া বাবা তরুণ দাস কৃষিকাজের সাথে যুক্ত। ছোটবেলা থেকেই অভাব, অনটন সঙ্গী ছিল সুপ্রিয়ার। সবসময় বাড়িতে থাকতো না পর্যাপ্ত খাবার। এর সাথে ছিল নিত্যদিনের আতঙ্কের পরিস্থিতি। সুপ্রিয়া জানান, চাপে পড়ে বাবা মা কে মাওবাদীদের বৈঠকে যেতে হতো। এমনকি চোখের সামনে মানুষ খুন হওয়াও দেখেছেন তিনি। তাঁর কথায়, সরকারি সাহায্য না পেলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ তাঁর গোটা পরিবার। সুপ্রিয়ার সাফল্যে খুশি তাঁর পরিবার থেকে এলাকার সবাই। যে পরিস্থিতি থেকে লড়াই করে সুপ্রিয়া সফল হয়েছেন, তা ভাবতেই পারেনি এলাকার বাসিন্দারা। এক বাসিন্দা নেপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘জেদ আর ইচ্ছেশক্তি ওকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে।’ দুঃস্বপ্নের অধ্যায় পেরিয়ে স্বপ্ন পূরণের নিদর্শন রাখলেন ঝাড়গ্রামের মেয়ে সুপ্রিয়া দাস।