পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অনৈতিকভাবে ওবিসি সার্টিফিকেট বিতরণের বিষয়ে একটি মামলা চলছে ভারতবর্ষের শীর্ষ আদালতে। এই মামলার কারণে এগোচ্ছে না কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া। সরকার চাইলেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ করতে পারছে না। এমনটাই প্রথম থেকে বলে এসেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এবারের ওবিসি মামলার সমস্যার সমাধান হলেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কম করে দুই থেকে তিন লক্ষ চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারি দপ্তর গুলিতে নতুন নিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। সেই পথে বাধ সাধছে ওবিসি সার্টিফিকেট সংক্রান্ত মামলাটি।
আসলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গত বছরেই অভিযোগ ওঠে যে তারা সরকারি দপ্তর থেকে অনৈতিকভাবে ওবিসি সার্টিফিকেট প্রদান করছে। যার ফলে প্রকৃত উপভোক্তারা সার্টিফিকেটের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই অনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কলকাতা উচ্চ আদালতে শুরু হয় ওবিসি সার্টিফিকেট সংক্রান্ত মামলা। এই মামলার রায় অনুসারে ২০১০ সাল থেকে সমস্ত ওবিসি উপভোক্তাদের সার্টিফিকেট বাতিল করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। এর ফলে ইতিমধ্যেই সমস্যার মধ্যে রয়েছেন আসল উপভোক্তারা। সার্টিফিকেট বাতিল হওয়ার পাশাপাশি স্থগিত হয়ে যায় রাজ্যের সরকারি নিয়োগগুলিও। যদিও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মত অনুসারে, ভোট ব্যাংকের জন্য অনৈতিকভাবে ওবিসি সার্টিফিকেট সরবরাহ করা হয়েছে। যার ফলে বর্তমানে সংকটের মুখে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রায় ২ কোটি চাকরি প্রার্থী।
আরও পড়ুনঃ বর্তমানে কি কি চাকরির ফর্ম ফিলাপ চলছে একনজরে দেখে নিন
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বিপুল পরিমাণে কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। শুধুমাত্র ওবিসি মামলার কারণেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিগত বিধানসভা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে একাধিক আলোচনা করেছেন। যেখানে গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে যে রায় এসেছে, সেটিকে সমর্থন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধান মেনে চলতে হবে। তবে জটিলতা কেটে গেলে এই চাকরিগুলো হবে।’
এর পাশাপাশি তিনি এটাও জানিয়েছেন যে এই ওবিসি মামলার জট কাটলেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসেবে ১ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীকে নিয়োগ করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পুলিশ, উচ্চমাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলি মিলিয়ে প্রায় ২ থেকে ৩ লক্ষ শূন্যপদ রয়েছে। একবার এই মামলার সমাধান হলেই একের পর এক পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিরোধীদলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “চাকরি আটকাতে মামলার খেলা খেলবেন না। আমার সঙ্গে শত্রুতা করলে আমার কাজের মনোবল বেড়ে যায়, এসব করে নিয়োগ আটকাবেন না। এসব খেলা খেলবেন না।”
আরও পড়ুনঃ ভারতীয় রেলে ১০ হাজার নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, কোন পদে নিয়োগ?
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে ওবিসি সংক্রান্ত মামলাটি জারি রয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পরে রাজ্য সরকার সঠিক বিচারের আশায় দারস্ত হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের কাছে। বিগত শুনানিতে কোর্টের পক্ষ থেকে পুনরায় নতুন করে সমীক্ষার জন্য রাজ্য সরকারকে পরবর্তী তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এই অতিরিক্ত সময়ের জন্য পরবর্তী শুনানের তারিখ জুলাই মাসে নির্ধারণ করা হয়েছে।