এক নজরে
পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল: ভারত ও ভারতের অন্তর্গত প্রত্যেকটি রাজ্যের নিজস্ব একটি জাতীয় ফুল রয়েছে। ভারতবর্ষের জাতীয় ফুল হল পদ্মফুল। প্রতিটি রাজ্যের জাতীয় ফুল বাকি রাজ্য গুলির থেকে আলাদা। ঠিক তেমনই পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল বাকি রাজ্যগুলির থেকে আলাদা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল কী? তা অনেকেরই অজানা রয়েছে। এই প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল কী? সে বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল কী (West Bengal National Flower)
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জাতীয় ফুল হল শিউলি ফুল। শিউলি ফুলটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত হলেও ফুলটি পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল সে বিষয়ে সবাই পরিচিত নন। শিউলি ফুল পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল বা রাজ্যফুল হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুলের নাম
পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুলের নাম হলো শিউলি ফুল। শিউলি ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হল নিকটেন্থিস অর্বোর ট্রিসটিস (Nyctanthes Arbor Tristis)। মূলত ফুলটি শরৎকাল অর্থাৎ ইংরেজি মাসের অক্টোবর মাসে ফুটতে দেখা যায়। শিউলি ফুলটি সাদা রংয়ের হয় এবং ফুলটিতে পাঁচ থেকে ছয়টি পাপড়ি থাকে।
রাতে ফোটার কারণে ফুলটির রং সাদা হয়। ফুলটি রাতে ফোটে এবং সকালে ঝরে পড়ে যায়। শরৎকালে ফুটলেও কমবেশি বারো মাস শিউলি ফুল ফোটে। শিউলি ফুলের গাছকে বিষন্ন তরু বা দুঃখের গাছও বলা হয়।
গাছের পাতাগুলো সবুজ রঙের এবং খসখসে প্রকৃতির হয়ে থাকে। পাতার কিনারা খাঁজ কাটা ও অগ্রপ্রান্ত সূচালো প্রকৃতির হয়। কচি পাতার ক্ষেত্রে খাঁচ কাটা বৈশিষ্ট্যটি লক্ষ্য করা যায়, পুর্নবয়স্ক পাতাগুলিতে খাঁজ কাটা থাকে না।
গাছ থেকে ফুল ঝরে যাওয়ার পর ২ সেন্টিমিটার ব্যাসযুক্ত ছোট ছোট ফল বা বীজ দেখতে পাওয়া যায়। দুটি ভাগে বিভক্ত এই ফলটির প্রতিটি ভাগে একটি করে বীজ দেখতে পাওয়া যায়।
শিউলি গাছের ভেষজ গুণ ও উপকারিতা
১) শিউলি ফুলের বীজ মাথার খুশকি নিরাময়ে খুবই উপযোগী।
২) কৃমির ঔষধ হিসেবে শিউলি গাছের পাতা খুবই উপকারী। পেটে কৃমি হলে শিউলি পাতার রস পান করলে কৃমির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৩) ম্যালেরিয়া রোগীর ক্ষেত্রেও শিউলি পাতার রস বিশেষ উপকারী।
৪) নিয়মিত কাশির সমস্যা হলে শিউলি পাতার রস খুব উপকারী।
৫) অল্পতে ঠান্ডা লাগার সমস্যা থাকলে, শিউলি পাতার রস গরম করে খেলে শরীরের পক্ষে উপকার হয়।
৬) রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া প্রতিহত করার ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস খুব উপকারী। শিউলি পাতার রসের মধ্যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
৭) আর্থরাইটিস রোগীরা শিউলি পাতা থেকে অনেক উপকার পেতে পারেন। শিউলি গাছের পাতা জলে ফুটিয়ে খেলে সেক্ষেত্রে বাতের রোগীরা আরাম পাবেন।
৮) ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে শিউলি পাতার রস উপকারী।
৯) হালকা জ্বর নিরাময়ে শিউলি পাতার রস খাওয়া যেতে পারে।
শিউলি ফুলের অন্যান্য নাম
শিউলি ফুলের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল নিকটেন্থিস অর্বোর ট্রিসটিস (Nyctanthes Arbor Tristis)। ইংরেজিতে বলা হয় নাইট ফ্লাওয়ারিং জেসমিন বা হ্যাসান্ত ফ্লাওয়ার্স বা নাইট ব্লুমিং জেসমিন। অনেক জায়গায় শিউলি ফুলকে শেফালী বা শেফালীকা ও বলা হয়। উড়িষ্যায় শিউলি ফুলকে গঙ্গা শিউলি বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও শিউলি ফুলকে হার্সিঙ্গার পুষ্পক, মালিকা প্রভৃতি নামে ডাকা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল কি (FAQs)
প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুলের নাম কি?
উত্তর: শিউলি।
প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল শিউলি কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর: পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও শিউলি ফুল বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান প্রকৃতি দিয়েছে দেখতে পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গ থাইল্যান্ডে এই ফুল দেখতে পাওয়া যায়। থাইল্যান্ডের কাঞ্চিবুরি প্রদেশের জাতীয় ফল হল শিউলি ফুল।
প্রশ্ন: শিউলি ফুলের বিজ্ঞানসম্মত নাম কি?
উত্তর: নিকটেন্থিস অর্বোর ট্রিসটিস।
প্রশ্ন: কোন সময় শিউলি ফুল ফোটে?
উত্তর: শরৎকালে অর্থাৎ ইংরেজি মাসের অক্টোবরে।